মন্ত্রণালয়ের ছাড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে অনীহা আমদানিকারকদের

Passenger Voice    |    ১২:৩০ পিএম, ২০২৪-০৩-০৪


মন্ত্রণালয়ের ছাড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে অনীহা আমদানিকারকদের

গুদাম ভাড়া বাঁচাতে এবং বাজারে পণ্যের দাম বাড়াতে অনেক আমদানিকারক দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ফেলে রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চলতি মাসে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠিও পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বলা হয়েছে, বন্দরে পণ্য বেশি দিন ফেলে রাখলে দেশের বাজারে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায়।

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্দরে পণ্য ফেলে রাখার প্রবণতা শুরু হয় কভিড-১৯ মহামারীর সময়। কিন্তু মহামারী গেলেও সেই প্রবণতা যায়নি। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৩১ কোটি টাকা আদায়যোগ্য ‘স্টোর রেন্ট’ সম্প্রতি মওকুফ করে মন্ত্রণালয়।  

বন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন মওকুফের সুবিধা পেয়ে আমদানিকারকদের মধ্যে পণ্য খালাসে অনীহা তৈরি হয়। তারা পণ্য বন্দর এলাকাতেই গুদামজাত করতে আগ্রহী হন। বন্দরে দীর্ঘ সময় পণ্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির সুযোগও নেন অনেক আমদানিকারক।’  

চলতি মাসে এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমদানিকারক কর্তৃক মালামাল যথাসময়ে খালাস নিতে না পারার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া স্টোর রেন্ট বন্দরের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ট্যারিফ আইটেম অনুযায়ী স্টোর ভাড়া যে হারে আদায় করা হয়, তা কোনো জরিমানাও নয়। তাই এভাবে ভাড়া মওকুফের সুবিধা পেলে আমদানিকারকরা তাদের আমদানি করা মালামাল বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় গুদামজাত করতে আগ্রহী হয়। এতে আমদানি করা পণ্য দেশের বাজারে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ তৈরি হয় এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারজট তৈরিরও এটি একটি বড় কারণ। এছাড়া এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘সীমিত সংরক্ষণস্থলে কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে ডুয়াল টাইম ও জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালে ২০২০ সালের স্টোর রেন্ট মওকুফ সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্টোর রেন্ট মওকুফের বিষয়টি অব্যাহত রাখা হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার ন্যায্য আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া এ ধরনের স্টোর রেন্ট মওকুফের ফলে চলতি বছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব অয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘স্টোর ভাড়া মওকুফের ক্ষমতা কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে নেই। বিষয়টি পুরোপুরি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। এ বিষয়ে একটা নীতিমালাও আছে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, ‘কনটেইনার খালাস বা অন্যত্র সরিয়ে না নিলে বন্দর গুদামই থেকে যাবে।’ 


প্যা/ভ/ম